ব্যাক্তিত্ব হোক প্রতিচ্ছবি!
ব্যাক্তিত্ব হোক প্রতিচ্ছবি!
ব্যক্তিত্ব যে কোনো মানুষের জীবনে অনেক বড় একটা সম্পদ। আপনি মন থেকে কেমন হতে পারেন তার অনেকটাই আপনার ব্যক্তিত্বে ফুটে ওঠে। তবে সবাই এক রকম নয়। কেউ কেউ নিজের মনের ভাবটা সঠিক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। তাদের জন্য হয়ে যায় বিপত্তি।
ধরে নেয়া যাক, আপনার পাশের বাড়ির খালাম্মা প্রতি ঈদে প্রতিবেশীদের বাড়িতে মিষ্টি কিছু পাঠান। এতে করে সবাই তার উপর প্রসন্ন থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ তার উপর খুশি হতে পারছেন না। কেন? কারণ, উনার বাড়িতে গেলে উনি সবসময় ভ্রুযুগল কুঁচকে কথা বলেন!
এভাবে ভ্রু কুঁচকে থাকলে কেউ কি ধারেকাছে ঘেঁষবে?
এই রকম উদাহরণ আশেপাশে অনেক আছে। হয়তো আপনি মন থেকেই কারও ভালো চাইছেন কিন্তু আপনার প্রকাশ ভঙ্গীতে অন্য কিছুই মনে হচ্ছে। এর ফলে আপনার বন্ধু হচ্ছে না, অফিসের কলিগেরা তেমন কথা বলছেন না, খেতে বসলে বাবা-মা ও মাঝে মাঝে দু’কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন।
এসব সমস্যার সমাধান কেউ দেয় না। সবাই ধরেই নেয় মানুষটা এমনই। কিন্তু আজ আমরা এসেছি এসব মানুষের জন্যই, যারা নিজের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলতে পারছেন না।
১. ভালো ইম্প্রেশন (প্রভাব) তৈরি করুন
হাসিমুখ
সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলুন। আপনাকে প্রথম দেখাতেই বা প্রথম কথা বলেই যার ভালো লেগে যাবে তার মনে আপনার জন্য ভালো একটা ইম্প্রেশন তৈরি হবে। তিনি অন্তত আপনার ব্যাপারে কিছু শুনলেও সেখানে আপনার পক্ষে দুটি কথা বলবেন। মনে রাখবেন, অনেকের মধ্যেও একজন যদি আপনাকে নিয়ে ভালো কিছু বলে বাকি দশজন সেটা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে। তাই কথা শুরু করতে পারেন হাসি দিয়ে।
হাসিমুখ
ম্যানার বা আচার আচরণ
আচার আচরণও অনেক বড় একটা ব্যাপার। বড় কারও সাথে দেখা হলে মাথাটা হালকা ঝুঁকিয়ে হাসিমুখে কথা শুরু করুন। আপনার নম্রতা প্রকাশ পাবে। কারও সাথে বাহিরে কোথাও গেলে মোবাইল ফোন ভাইব্রেশনে রাখুন। ছোটোখাটো এমন অনেক বিষয় রোজই আপনার সামনে আসবে যা আপনার ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলে। যেমন, অফিসে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইডি কার্ড পরে যাওয়াটাও এক ধরনের সম্মান প্রদর্শনের মধ্যে পড়ে।
‘প্লিজ’ বললে কেউ ছোটো হয় না
সুন্দর করে প্রশ্ন করুন
প্রশ্ন কী করে সুন্দর হয়? আসলে প্রশ্ন করার ধরনেও অনেক কিছু লুকিয়ে থাকে। যেমন, আপনি পরিচিত কাউকে রাস্তায় পেয়ে গেলেন। তাকে চায়ের জন্য বলতে পারেন এভাবে, “আমি চা খেতেই বেড়িয়েছিলাম, চলো না হয় আমার সাথে। যাবে?” এর বদলে যদি আপনি প্রশ্ন করেন, “আমি ত চা খেতে যাচ্ছিলাম, তুমি কি যাবে আমার সাথে?” তাহলে খুব শ্রুতিকটু শোনায়। এমন ভাবে প্রশ্ন করুন যেন অপরপক্ষ বুঝতে পারে আপনি ‘হ্যা-বোধক’ উত্তরই আশা করছেন। কাউকে যদি দাওয়াত করেন এবং আপনার প্রশ্নে ‘না’ শোনার আশা উঁকি দেয় তাহলে বিষয়টা ভালো ভাবে গ্রহনযোগ্য হবে না।
কথা রাখুন
কথা দিয়ে কথা রাখুন। হতে পারে সেটা খুব ছোটো বিষয়। কিন্তু যেমনটি আগে বলে এসেছি যে এই ছোটো ছোটো বিষয়গুলোই আপনার ব্যক্তিত্বে অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। কাউকে যদি বাসায় পৌঁছে একটা মেসেজ দেবার কথা থাকে তাহলে সেটিও করে নিন। এমনও হতে পারে অপর প্রান্তের মানুষটি আপনার জন্য দুশ্চিন্তা করছেন।

সাহায্য করুন
সাহায্য করা মানেই অর্থ দিয়ে কারও পাশে দাঁড়ানো নয়। রাস্তা পার করতে সাহায্য করা, কারও জন্য আসার পথে কিছু নিয়ে আসা, রান্নার সময়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করে তার ক্লান্তি কমিয়ে দেয়া এগুলোও সাহায্যের মধ্যে পড়ে। প্রতিদিন কাউকে না কাউকে সাহায্য করুন। ঘরে বাইরে যে কোনো জায়গায় আপনার নিজ সাধ্যের মধ্যে যতখানি সম্ভব এগিয়ে আসুন। এক গ্লাস পানি খাওয়ানোতেও সাহায্য প্রকাশ পায়। এটা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়।
সাহায্য করুন
২. কথোপকথনের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
প্রতিদিন বই পড়ুন
বই পড়ার সাথে আপনার কথা বলার দক্ষতার কি কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে? অবশ্যই পারে। যিনি বই লেখেন তিনি ওই বিষয়ের উপর অনেক খেটেখুটে লিখেছেন। সেখান থেকে আপনি অনেক কিছুই জানতে পারবেন। আর অনেক কিছু জানার ফাঁকে ফাঁকে আপনার কথা বলার ধরনও অনেকটা বদলে যাবে। আর কিছু না হলেও অন্তত লেখকের লেখা থেকে আপনি কথা বলার ধরন রপ্ত করতে পারেন।

শ্রোতা হোন
একজন ভালো বক্তা হতে হলে ভালো শ্রোতা হওয়া অনেক বেশি দরকারি। আপনি যখন কারও কথা মন দিয়ে শুনবেন তখন তিনি বুঝতে পারবেন আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং তিনি মন খুলে কথা বলায় আগ্রহী হবেন। আপনি যত বেশি মানুষের কাছ থেকে খোলা মনে কথা শুনতে পারবেন আপনার কথা বলার দক্ষতা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।

‘ফোন’ থেকে দূরে থাকুন
কারও সাথে কথা বলার সময়ে ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। হয়তো আপনি ঠিকই তার কথা মন দিয়ে শুনছেন কিন্তু তার কাছে ব্যাপারটা ভালো নাই লাগতে পারে। সম্পূর্ণ এক নিবিষ্টে কথা শোনা বা বলা আপনার ভালো ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। এই সময়ে আপনি অন্য কিছুতে ব্যস্ত থাকলে সরাসরি সময় চেয়ে নিন। কিন্তু কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সেলফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. জীবন উপভোগ করুন
নতুন মুখের সাথে পরিচিত হোন
আপনার পাশের বাসায় হয়তো অনেক বছর যাবত একটি পরিবার থাকতো যাদের সাথে আপনার সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো। কোনো কারণে তারা অন্য কোথাও চলে গেলেন এবং নতুন একটি পরিবার সেখানে আসলো। প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার মন খারাপ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের সাথে পরিচিত হোন। হতেও পারে তাদের সাথে সম্পর্ক আরও ভালো হলো।
শখে পরিবর্তন আনুন
হতে পারে বাগান করা আপনার শখ। কারণ, আপনি জানেন যে আপনি ঘরমুখো মানুষ। বাইরে বেরিয়ে দেখুন। হতেও পারে বিভিন্ন টং এর চা চেখে দেখতে আপনার ভালো লাগে, ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে এমনকি হতে পারে ঘোড়ায় চড়তে আপনার ভালো লাগে। পরিবর্তন এনেই দেখুন।
শুধুমাত্র নিজের জন্য কিছু করুন
প্রতিদিন শুধুমাত্র নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখুন। নিজের জন্য সময় রাখা মানে ফেইসবুকিং কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া হতে পারে না। নিজের জন্য সময় বলতে সেই সময়টা শুধুই আপনার। আশেপাশে আর কেউ নেই। এই সময়টাতে আপনি ছোটোবেলার অ্যালবাম বের করে ছবি দেখতে পারেন, প্রিয় মানুষকে চিঠি লিখতে পারেন, সাইকেলে করে দূরে কোথাও ঘুর আসতে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন, নতুন কিছু রান্না করতে পারেন। যা-ই করুন, নিজেকে আনন্দ দিন।

ধন্যবাদ দিন
ধন্যবাদ দেয়াটা খুব কঠিন কিছু না। তারপরেও আমরা এটা করতে ভুলে যাই। ছোটো ছোটো ব্যাপারেও ধন্যবাদ দিন। দেখবেন যাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন শুধু তারই ভালো লাগছে এমনটা নয়, আপনারও নিজেকে খুব সুখী মনে হচ্ছে। আপনার ডায়েরির একটা পাতা রাখতে পারেন ‘গ্র্যাটিচিউড’ পৃষ্ঠা হিসাবে। প্রতিদিন অন্তত একজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে দুটি লাইন লিখুন। সপ্তাহ বা দিন শেষে কখনও মন খারাপ হলে ওই পৃষ্ঠা খুলে ভালো সময়গুলো মনে করুন। মন ভালো হয়ে যাবে।
ব্যক্তিত্ব শব্দটি অনেক গাম্ভীর্যপূর্ণ শোনালেও আপনি যা, তা-ই আপনার ব্যক্তিত্ব। এটা নিয়ে আলাদা কোনো সেশনের প্রয়োজন নেই। এর জন্য কোনো ট্রেনিং এর প্রয়োজন নেই। শুধু প্রয়োজন নিজেকেই নিজে একটু এগিয়ে নেয়া। মন খোলা হোন। মনে রাখবেন, আপনার ব্যক্তিত্বই আপনার প্রতিচ্ছবি।
Sample Block Quote
Praesent vestibulum congue tellus at fringilla. Curabitur vitae semper sem, eu convallis est. Cras felis nunc commodo loremous convallis vitae interdum non nisl. Maecenas ac est sit amet augue pharetra convallis nec danos.
Sample Paragraph Text
Praesent vestibulum congue tellus at fringilla. Curabitur vitae semper sem, eu convallis est. Cras felis nunc commodo eu convallis vitae interdum non nisl. Maecenas ac est sit amet augue pharetra convallis nec danos dui.
Cras suscipit quam et turpis eleifend vitae malesuada magna congue. Damus id ullamcorper neque. Sed vitae mi a mi pretium aliquet ac sed elitos. Pellentesque nulla eros accumsan quis justo at tincidunt lobortis denimes loremous. Suspendisse vestibulum lectus in lectus volutpat, ut dapibus purus pulvinar. Vestibulum sit amet auctor ipsum.